পাবনা শহরে অবৈধ র্যাফেল ড্রয়ের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। মাত্র ২০ টাকায় মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, স্বর্ণালংকারসহ নানা লোভনীয় পণ্যের প্রচারণায় চলছে টিকিট বিক্রি।
লোভে পড়ে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষ প্রতারিত হলেও আয়োজকদের দাবি, প্রশাসনের মৌখিক অনুমতিতেই চলছে এই লটারির নামে মানুষ ঠকানোর খেলা। কেবল পাবনা শহর নয়, জেলা প্রতিটি উপজেলা ও থানার গ্রাম-গঞ্জে চলছে এই অভিনব জুয়া। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে স্থানীয় ক্যাবল টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারে লটারির ড্র হলেও এই এই অবৈধ বাণিজ্য বন্ধের ব্যাপারে নির্বিকার প্রশাসন।
প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে পাবনার টেলিভিশন দর্শকরা টিভি সিরিয়াল দেখা ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ সন্ধ্যা হলেই এখন পাবনায় শিল্প ও বাণিজ্য মেলা থেকে সরাসরি ‘কেবল টিভি নেটওয়ার্কের’ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে দোকান পাট ছাড়া বাণিজ্য মেলার দৈনিক লটারির ফলাফল ঘোষণা ! যেখানে লটারির ড্র’ পরিচালক ‘ওঠাও বাচ্চা, নেড়ে চেড়ে ওঠাও’ বলে আকর্ষণীয় ঢং এ ঘোষণা করছে ফলাফল ।
আর পাবনা শহর ও এর আওতাভুক্ত সিংহভাগই ক্যাবল টিভির দর্শক লটারির নেশায় বুঁদ হয়ে দেখছে ওই দৃশ্য। গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে পাবনার রেলস্টেশন সংলগ্ন লষ্করপুরে এ শিল্প ও বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। লটারির নামে প্রতিদিন প্রায় অর্ধ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে মেলা চত্বরসহ পাবনা সদর, সুজানগর, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বেড়া, সাঁথিয়া ও এর আশপাশের কমপক্ষে এক দেড়শ’ স্পটে।
পুঁজি ভেঙ্গে ও ধারদেনা বা ঋণ নিয়েও এলাকার অসংখ্য গরীব, ধনীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ লটারির টিকিট কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হয়ে ঘরে ফিরে হাঁ-হুঁতাশ করছে। ফলে, হাতে টাকা না থাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে তাদের জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। আর প্রকাশ্যে দিবালোকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে এ মেলায় লটারির নামে প্রতিদিন কোটি টাকার জুয়া বাণিজ্য পরিচালনা করছেন জনৈক লিটন! লটারির নামে রমরমা জুয়া ও সার্কাসের অন্তরালে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শন করা হলেও ভূত তাড়ানো তেলের মধ্যে ভূত ঢুকে পড়ায় এসব অপকর্ম কিছুতেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে এলাকার সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
পাবনার রেলস্টেশন সংলগ্ন লষ্করপুরে চলমান শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বেশ কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেল, শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় কেনাকাটা করার জন্য এসে দেখলাম নামকাওয়াস্তে কিছু দোকান পাট থাকলেও সেখানে পছন্দসই কেনাকাটার জন্য তেমন কিছুই নেই। তবে লটারি ও সার্কাসের নগ্ন নৃত্য দেখার জন্যই সিংহভাগ লোকজন এসেছে মেলায়। পুলিশ পাহারাও দিচ্ছে সেখানে। পুলিশ সম্ভবত লটারির আয়োজকদের নিরাপত্তা দিতেই সেখানে অবস্থান করছে এমন মন্তব্যও করলেন অনেকেই। দেখার কেউ নেই ! নেই প্রতিকারেরও বুঝি কেউ !
এ বিষয়ে মুঠোফোনে মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পরিচালক রাইফা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী লিটনের সাথে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার কাজ হলো ইভেন্ট পরিচালনা করা’ পাবনা শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় লটারি চালানোর কোন অনুমোদন জেলা প্রশাাসন দিয়েছেন কি না সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আয়োজকেরা বলতে পারবেন।
এদিকে মুঠোফোনে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অন্তরালে প্রতিদিন অর্ধ কোটি টাকার লটারির নামে জুয়া ও অশ্লীল নৃত্যের মতো বেআঈনী কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে পাবনা জেলা প্রশাসক মোঃ বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘আমরা লটারি বন্ধ করে দিয়েছি।’
কিন্তু পাবনা শহরের হামিদ রোডে গেলে মনে হয় যে লটারির কেনার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে লটারি বিক্রিত অটোরিক্সার নিকট। আর এ সুযোগে মানুষকে বোকা বানিয়ে লটারির টিকিট বিক্রি করছে । তাই অতিদ্রুত পাবনা শিল্প ও বানিজ্য মেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে পাবনার সচেতন মহল।